বৃহস্পতিবার ৯ অক্টোবর ২০২৫ - ১৭:২৯
যুদ্ধক্ষেত্র ও কূটনৈতিক টেবিলে হামাসের জয়

দুই বছরের অবিরাম প্রতিরোধের পর হামাস এক বিশাল বিজয় অর্জন করেছে। এই প্রতিরোধ গাজার ওপর সম্পূর্ণ আধিপত্য বিস্তারের আকাঙ্ক্ষা থেকে ইসরায়েলকে পিছু হটতে বাধ্য করেছে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: জায়নবাদী শাসকগোষ্ঠী এবং ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের (হামাস) মধ্যে আলোচনার প্রাথমিক খবর ইঙ্গিত দেয়, গাজার জনগণের সর্বাত্মক প্রতিরোধ, হামাস ও ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর দৃঢ়তা এবং প্রতিরোধ ফ্রন্টের সদস্যদের শক্তিশালী সমর্থন ইসরায়েলকে এই বিশ্বাসে এনেছে যে, হামাসকে সামরিকভাবে পরাজিত করা এবং গাজায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়, এবং তাদের অসাধ্য স্বপ্নকে বিদায় জানাতে হবে। 

সামরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আন্তর্জাতিক এবং জনমতের ক্ষেত্রে দুই বছর পরাজয় ভোগ করার পর জায়নবাদী শাসকগোষ্ঠী তাদের মূল লক্ষ্য যা ছিল- হামাসকে ধ্বংস করা এবং গাজা সম্পূর্ণ দখল করা—তা ত্যাগ করতে হয়েছে। দখলদার রাষ্ট্রটি মধ্যস্থতার মাধ্যমে আলোচনার টেবিল সক্রিয় করতে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করেছে। ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক আগ্রাসনে ব্যর্থ হওয়ার পর ইসরায়েল আবারও তাদের পরাজয় থেকে বাঁচতে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারস্থ হয়েছে। ট্রাম্পের এই কথাটি অযৌক্তিক নয় যে, ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণ শান্তি আলোচনাকে ত্বরান্বিত করেছে। কারণ যদি যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসনে জয়ী হতো, তাহলে তারা আলোচনার টেবিল নিয়ে ভাবত না এবং ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে একই সামরিকীকরণ প্রক্রিয়া চালিয়ে যেত।

যুদ্ধক্ষেত্রে হামাসের বিজয় এসেছিল অপারেশন আল-আকসা স্টর্মের সময় জায়নবাদী শাসকগোষ্ঠীর অবস্থানে একটি আগাম আক্রমণের পর। ফিলিস্তিনি মুক্তিকামী গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদ ও প্রতিরোধ ফ্রন্টের সদস্য লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের আন্সারুল্লাহ এবং ইরাকি প্রতিরোধের সামরিক সমর্থন তেল আবিব এবং আশকেলনের মতো সক্রিয় বন্দরগুলোকে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে। এতে শাসকগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অন্যদিকে, যুদ্ধক্ষেত্রে শক্তিহীন জায়নবাদী শাসকগোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্রের অবিচল সমর্থনে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংস আক্রমণ, শিশু ও নারীদের গণহত্যা এবং ৬৫,০০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনিকে শহীদ করে বিশ্বজুড়ে ঘৃণিত হয়েছে। অবশেষে, দুই বছরের অপরাধের পর ইসরায়েল শার্ম এল-শেখ আলোচনায় গাজা উপত্যকা থেকে সৈন্য প্রত্যাহারে সম্মত হয়েছে। এই চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে, ফিলিস্তিনি ইসলামিক প্রতিরোধ আন্দোলন (হামাস) ২৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দি এবং যুদ্ধের শুরু থেকে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর হাতে আটক ১,৭০০ গাজাবাসীকে মুক্ত করতে সফল হবে। বিনিময়ে চুক্তির প্রথম ধাপে দখলদার শাসকগোষ্ঠীর ২০ জন জীবিত বন্দিকে মুক্ত করবে।

এছাড়াও, গাজার অরক্ষিত জনগণের জন্য প্রতিদিন ৪০০টি সাহায্যবাহী ট্রাক পাঠানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে এবং পরবর্তী ধাপগুলোতে এই সংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে। হামাস কেবল তাদের সামরিক বাহিনীকে নিরস্ত্র করতে সম্মত হয়নি, বরং এক বিবৃতিতে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের জন্য তাদের ও অন্যান্য ফিলিস্তিনিদের দৃঢ় সংকল্পের ওপর জোর দিয়েছে।

সামগ্রিকভাবে, ফিলিস্তিনি জনগণের মহান প্রতিরোধ এবং প্রতিরোধ যোদ্ধাদের যুদ্ধক্ষেত্রের সাহস ও বীরত্ব এবং প্রতিরোধের প্রতি বিশ্ববাসীর ব্যাপক সমর্থন হামাসকে কর্তৃত্বের সাথে আলোচনার টেবিলে উপস্থিত হতে এবং দুর্দান্ত দর কষাকষির ক্ষমতা নিয়ে প্রতিরোধের লক্ষ্যগুলো রক্ষা করতে সাহায্য করেছে।

এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কর্তব্য হলো ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখা এবং জায়নবাদী দখলদারদেরকে চুক্তিটি সম্পূর্ণভাবে কার্যকর করতে বাধ্য করা।

হামাস এবং প্রতিরোধ ফ্রন্ট যুদ্ধক্ষেত্র ও কূটনীতিতে জয়ী হয়েছে এবং সাইয়্যেদ হাসান নাসরাল্লাহ, ইয়াহইয়া সিনওয়ার, ইসমাইল হানিয়াহ প্রমুখ মহান শহীদদের জন্য এটা উপযুক্ত সম্মান, যারা প্রতিরোধের স্থিতিশীলতা এবং শত্রুর পরাজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha